তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া

তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের একটি বিশেষ নফল ইবাদত, যা রাতে নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা হয়। এটি মহান আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়ার এবং দোয়া করার একটি বিশেষ সুযোগ। এই নামাজটি অন্যান্য নামাজের মতো বাধ্যতামূলক না হলেও, এটি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয় এবং অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হচ্ছে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ, ইশা নামাজ আদায়ের পর থেকে শুরু করে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত যে সময় থাকে, তার মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা হয়। যদিও যেকোনো সময় রাতে এই নামাজ আদায় করা যায়, তবে রাতের শেষ ভাগে, যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তখন এই নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

ইসলামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেছেন, রাতের শেষ অংশে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে নেমে আসেন এবং তাঁর বান্দাদের আহ্বান শুনেন। এই সময় দোয়া করলে তা খুবই কবুল হয়। তাই যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন, তারা সাধারণত এই সময়কে বেছে নেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের কয়েকটি নিয়ম আলোচনা করা হলো:

১. ইশা নামাজ পড়া: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো, ইশা নামাজ আদায় করা। ইশা নামাজ আদায়ের পর যদি কেউ ঘুমায়, তবে রাতে তাহাজ্জুদ পড়া তার জন্য বেশি ফজিলতপূর্ণ হয়।

২. ওজু করা: ঘুম থেকে উঠে ওজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করতে হবে। ওজু না থাকলে নামাজ আদায় করা যায় না।

৩. রাকাত সংখ্যা: তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সাধারণত ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮ বা ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই এই রাকাত সংখ্যা অনুসরণ করা উত্তম।

৪. দোয়া ও ইস্তেগফার: তাহাজ্জুদ নামাজের পর বিশেষভাবে দোয়া ও ইস্তেগফার করা উচিত। এই সময়ে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং প্রয়োজনীয় দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আগে নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত ছাড়া কোনো নামাজই গ্রহণযোগ্য নয়। নিয়ত করা মানে হলো মনের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ইচ্ছা রাখা। মুখে নিয়ত বলতে হয় না, তবে কেউ চাইলে বলতেও পারে। নিয়তের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:

“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাহাজ্জুদা রাক’আতাইনি ফারযাল্লিল্লাহি তা’আলা”

অর্থাৎ: “আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের দুই রাকাত পড়ার নিয়ত করছি।”

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই নামাজের শেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজ নিজ সমস্যা, পাপ, কষ্ট, ইবাদত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে দোয়া করা যায়। যেহেতু এই সময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করেন, তাই অত্যন্ত বিনীতভাবে দোয়া করা উচিত।

দোয়ার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:

“রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান ওয়াকিনা আযাবান নার”

অর্থাৎ: “হে আমাদের প্রভু! আমাদের এই পৃথিবীতে কল্যাণ দাও, এবং পরকালে কল্যাণ দাও, এবং আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।”

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এতটাই বেশি যে, কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে এই ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন:

“তোমার রব্ জানেন, তুমি ও তোমার সঙ্গীরা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক সময় ইবাদতে কাটাও।” (সূরা মুজাম্মিল: ২০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজকে খুবই গুরুত্ব দিতেন এবং সাহাবীগণকেও এটি পড়তে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করো, কারণ এটা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের প্রথা এবং তোমাদের রবের নৈকট্য লাভের মাধ্যম। তাহাজ্জুদ পড়া পাপ মুছে দেয় এবং অন্যায় থেকে মানুষকে বিরত রাখে।” (তিরমিজি)

উপসংহার

তাহাজ্জুদ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত, যা আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক। এই নামাজ রাতের নির্জন মুহূর্তে আদায় করা হয়, যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের আহ্বানে সাড়া দেন। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন, তারা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেন।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ ইশা নামাজের পর থেকে ফজরের আজানের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় আদায় করা যায়। তবে রাতের শেষ ভাগে পড়া উত্তম।

প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা কত?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সাধারণত ২ থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।

প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম কি?

উত্তর: ইশা নামাজ আদায়ের পর ওজু করে ২ বা ৪ রাকাত করে তাহাজ্জুদ পড়া যায়।

প্রশ্ন: কি দোয়া তাহাজ্জুদ নামাজে পড়তে হয়?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজের পর যেকোনো প্রয়োজনীয় দোয়া করা যায়। “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান” দোয়াটি জনপ্রিয়।

প্রশ্ন: কি করলে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত পাওয়া যাবে?

উত্তর: রাতের শেষ অংশে ঘুম থেকে উঠে ওজু করে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ইবাদত করলে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত পাওয়া যায়।


তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব, তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া, তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব, তাহাজ্জুদ নামাজ কেন পড়বেন, তাহাজ্জুদ নামাজের হাদিস, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি, তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত কি, তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া কি, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি, তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব কি, তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়া উত্তম, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পদ্ধতি, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও পদ্ধতি, তাহাজ্জুদ নামাজ কেন পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজ কতক্ষণ পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া ও নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের হুকুম, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত কি, তাহাজ্জুদ নামাজের হাদিস কি, তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব কি, তাহাজ্জুদ নামাজ