আয়াতুল কুরসি: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত

ইসলামের সবচেয়ে মহিমান্বিত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলোর মধ্যে একটি হলো আয়াতুল কুরসি। এটি কুরআনের সুরা বাকারা (আয়াত ২৫৫)-এর অন্তর্ভুক্ত একটি আয়াত, যা মুসলমানদের জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই আয়াতের পাঠে আল্লাহর একত্ববাদের গুরুত্ব, শক্তি এবং রহমতের বিবরণ রয়েছে। নিচে আয়াতুল কুরসির উচ্চারণ, অর্থ এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

আয়াতুল কুরসি উচ্চারণ:

“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়্যুম, লা তা’খুজুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওম, লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জল্লাযি ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বিইজনিহি? ইয়াআলামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়ালা ইয়ুহিতূনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ, ওয়াসি’য়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা, ওয়া হুয়াল আলিয়্যুল আজীম।”

আয়াতুল কুরসির অর্থ:

আল্লাহ, যিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা প্রতিষ্ঠিত। তাঁকে কখনও ঘুম বা তন্দ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনের সমস্ত কিছু তাঁরই অধিকারভুক্ত। কে সেই ব্যক্তি, যে তাঁর কাছে সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ব্যতীত? তিনি জানেন যা কিছু আছে তাদের সামনে এবং যা কিছু তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই আয়ত্ত করতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তার বাইরে। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে, আর তাদের রক্ষা করা তাঁর জন্য কোন ক্লান্তির বিষয় নয়। তিনি সর্বোচ্চ এবং মহিমাময়।

আয়াতুল কুরসির ফজিলত:

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা মুসলিমদের জন্য অনেক বড় সওয়াবের কারণ এবং তা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিশেষ নিরাপত্তা ও আশীর্বাদ এনে দেয়। হাদিস অনুযায়ী, আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে অনেক শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ফজিলত অর্জিত হয়। নিচে এর কয়েকটি ফজিলত তুলে ধরা হলো:

১. শয়তানের থেকে রক্ষা:

আয়াতুল কুরসি পাঠকারী ব্যক্তিকে শয়তান স্পর্শ করতে পারে না। সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, সে রাতভর শয়তান থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

২. জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ:

হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাযের পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার দরজা খোলা হয়ে যায়।”

৩. বিপদ থেকে মুক্তি:

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা বিপদ এবং দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির উপায়। এটি পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া যায় এবং সকল ধরনের অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৪. রিজিকের বরকত:

আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে রিজিকের বরকত হয় এবং আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য সকল প্রকার কল্যাণের দরজা খুলে দেন।

৫. গৃহের সুরক্ষা:

আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে বাড়ি বা গৃহের উপর শয়তানের প্রভাব কমে যায় এবং বাড়ির পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে। হাদিসে বলা হয়েছে, আয়াতুল কুরসি যে ঘরে পাঠ করা হয়, সেখান থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।

আয়াতুল কুরসি পাঠের সময়:

  • প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা।
  • রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • যেকোনো বিপদ, দুশ্চিন্তা বা অসুস্থতার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করা উত্তম।

উপসংহার:

আয়াতুল কুরসি কেবল একটি আয়াত নয়, এটি মুসলমানদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ও রিজিকের মাধ্যম। এর ফজিলত ও গুণাগুণ এতই বেশি যে প্রতিদিন এটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমত, সুরক্ষা, শান্তি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করা যায়। এজন্যই প্রতিদিনের নামাজের পর এবং যেকোনো বিপদের সময় এটি পাঠ করা উচিত। মুসলমানদের জীবনে আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব অপরিসীম, এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হওয়া উচিত।

প্রশ্ন ও উত্তর:

১. আয়াতুল কুরসি কোন সুরার অন্তর্ভুক্ত?

  • আয়াতুল কুরসি কুরআনের সুরা বাকারা (আয়াত ২৫৫)-এর অন্তর্ভুক্ত।

২. আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত কী?

  • আয়াতুল কুরসি পড়লে শয়তান থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

৩. কতবার আয়াতুল কুরসি পড়া উত্তম?

  • প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে এবং ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া উত্তম।

৪. আয়াতুল কুরসি পড়ার মাধ্যমে কি রিজিকের বরকত হয়?

  • হ্যাঁ, আয়াতুল কুরসি পড়লে রিজিকের বরকত হয় এবং আল্লাহর কাছে কল্যাণের দরজা খুলে যায়।

৫. আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে বাড়ি কি সুরক্ষিত থাকে?

  • হ্যাঁ, আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে বাড়ির পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে এবং শয়তান তার প্রভাব হারায়।

আশা করা যায়, এই আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আপনারা সহজেই বুঝতে পেরেছেন। নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহর রহমত ও আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব।


আয়াতুল কুরসি, আয়াতুল কুরসি বাংলা, আয়াতুল কুরসি উচ্চারণ, আয়াতুল কুরসি অর্থ, আয়াতুল কুরসি ফজিলত, আয়াতুল কুরসি সুরা, আয়াতুল কুরসি হাদিস, আয়াতুল কুরসি পড়ার নিয়ম, আয়াতুল কুরসি এর উপকারিতা, আয়াতুল কুরসি নামাজের পর, আয়াতুল কুরসি দোয়া, আয়াতুল কুরসি ঘুমানোর আগে, আয়াতুল কুরসি সুরক্ষা, আয়াতুল কুরসি মঙ্গলজনক, আয়াতুল কুরসি পড়ার সময়, আয়াতুল কুরসি মর্ম, আয়াতুল কুরসি ইসলামিক গুরুত্ব, আয়াতুল কুরসি বাংলা তর্জমা, আয়াতুল কুরসি পঠনের ফজিলত, আয়াতুল কুরসি শক্তি